Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
অতিথি পাখির গ্রাম পচামাড়িয়া
Location
পচামাড়িয়া
Transportation
এটি জেলা শহর হতে ৫০ কিলোমিটার ও উপজেলা হতে ২০ কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এই পচামাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। প্রথমত জেলা ও উপজেলা শহর হতে বাসে করে বাসুপাড়া বাজারে নামতে হবে, তারপর সেখান থেকে রিক্সা করে পচামাড়িয়া গ্রামে যেতে হবে।
Details

   পাখি বিশেষ্ণদের মতে পচামাড়িয়া বিশ্বের অন্যতম বৃহত পাখির গ্রাম। এখানে সারা বৎসর বিভিন্ন প্রকার দেশি ও অতিথি পাখিরা ভিড় করে। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের একটি বৃহত গ্রাম পচামাড়িয়া। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টিও এই গ্রামে অবস্থিত। বহুদিন থেকে পচামাড়িয়া গ্রামের বাঁশ ঝাড় গুলোতে পাখি বাস করে। বারনই নদীর অববাহিকায় বৎসরের অনেকটা সময় জলাবদ্ধতা থাকে ইউনিয়নের খাল-বিলে। এইসব বিলের কিনারে গ্রাম গুলোতে মানুষের বসবাস। ফুল, ফল, ফসলে ও গাছ গাছালিতে ভরপুর, সুন্দর, মনোরম শিলমাড়িয়া ইউ পির প্রায় ৪২ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা। এখান কার মানুষ শান্ত ও সাংস্কৃত মনা। এখানে খাল বিলের অধিক্ষ থাকায় শীত মৌসুমে আসে অতিথি পাখি।

   অনেকদিন থেকে পচামাড়িয়াতে পাখি বসবাস করলেও এর সংরক্ষন শুরুহয় মূলত ২০০৪ সালে প্রথমে। গ্রামের কিছু যুবক এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে। পরে তারা এ বিষয়ে সহযোগীতার জন্য আসে স্থানিয় ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল এর কাছে। বিষয়টি শুনে চেয়ারম্যান সঙ্গে সঙ্গে উদ্দেগ গ্রহন করে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে পাখি মারা নিসিদ্ধ করে দেন। এখান থেকে শুরু তারপর পর্যায়ক্রমে গ্রামের মানুষসহ এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াহয় বিষয়টি ,বিভিন্ন মিটিং, সমাবেশ, স্টলে আলোচনায় মাইকিং করে পাখি মারতে নিষেধ করা হয় মানুষকে। এর এক বৎরের মধ্যে পচামড়িয়াতে ২০০৫ সালে পাখির সংখ্যা অনেকটা অলৌকিক ভাবে প্রায় কয়েক গুন বেড়ে যায়।২০০৬ সালে প্রথম থেকে শুরু হয় আরো অনেক উদ্যোমে পাখি সংরক্ষনের কাজ। এলাকা বাসিকে নিয়ে গঠন করা হয় ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পাখি সংরক্ষন কার্যকরী কমিটি এবং ১০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাধারণ কমিটি এর উদ্দেশ্য পাখি সংরক্ষনে এলাকা সর্বসাতরের মানুষকে সংপিক্ত করা । আরো ব্যপক ভাবে মাইকিং করা হয়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাংগানো হয় সাইন বোর্ড, ব্যানার। যেহেতু পাখি মূলত বিকাল থেকে রাত্রে পচামাড়িয়াতে অবস্থান করে, আর বাঁকি সময় খাবারের জন্য বিভিন্ন বিলে যায়। তাই চেয়ারম্যান সাহেব সারা শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে যেকোন ধরনের পাখি মারা নিষিদ্ধ করে দেন। বর্তমানে ইউনিয়নের কোথাও মানুষ পাখি মারে না।যদি বহিরাগত কেহ আসে তাহলে জনগন তাদের প্রতিহত করে। আর না পারলে তখন চেয়ারম্যানের সরনাপন্ন হয়।

 

   এর পর পচামাড়িয়া পাখির গ্রাম দেশে এ বিষয়টি প্রথমে ৩/২/২০০৬ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকার মাধ্যমে রিপোটার জনাব আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ ব্যাপক ভাবে তুলে ধরেন, তারপর সমকাল,যুগান্তও, জনকণ্ঠ, স্থানীয় সানসাইন, সোনালী সংবাদ পত্রিকার এবং বিটিভি, চ্যানেল আই,চ্যানেল ওয়ানসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে পচামাড়িয়া পাখির কথা প্রচার হয়। বিভিন্ন মিড়িয়ায় প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বহু পাখি বিশেষ্ণ যেমন দুবাই চিড়িয়াখানার টিউটেটর ডাঃ  আলী রেজা খান, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি পাখি বিশেষ্ণ ইনাম আল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ( W T B) এর ট্র্যাষ্টি ডঃ আনোয়ারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি পর্যটকসহ শিক্ষক,ছাত্র ,পাখি প্রেমি,বিশেষ্ণ এবং সর্বস্তরের মানুষের আগমন ঘটে। প্রতি বৎসর নভেম্বর থেকে পাখি আসা আরম্ভ হয় থাকে মার্চ পর্যন্ত। তবে বেশি পাখি  দেখা যায় ডিসেম্বর, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে । এছাড়া সারা বৎসর এখানে পাখি থাকে, অনেক পাখি বাসাও বাধেঁ। পচামাড়িয়াতে দেশি বহু প্রজাতির পাখি সব সময় থাকে। তাছাড়া যেসব পাখি প্রধানত শীত কালে বেশি আসে তাহলো শামুখখল, বিভিন্ন প্রজাতীর প্রানকৌড়ি,বিভিন্ন প্রজাতীর বক,বিড়ল প্রজাতীর উদই গয়ারসহ বহু প্রজাতীর পাখি।

 

   পাখি এখন শুধু পচামাড়িয়া গ্রামে সীমাবদ্ধ নাই। পার্সবর্তি যশোপাড়া, কার্তিক পাড়ার, বড়বড়িয়া, অমৃতপাড়া  কানমাড়িয়া গ্রামেও বিস্তর লাভ করেছে। পচামাড়িয়া পাখি সংরক্ষন কমিটি সব সময় পাখি সংরক্ষনের জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। পাখি নামারা, গাছ ও বাঁশ না কাটা,  পাখি সংরক্ষনের নানা আয়োজন ,মানুষকে সচেতন করা ইত্যাদি। এই কমিটি ২০০৭ সালে পাখি বিষয়ে সচেতন সৃষ্টির লক্ষে পাখি মেলার আয়োজন করে। পাখি সংরক্ষন ও পৃষ্ট পোষাকতা জন্য  জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় যৌথ উদ্যোগে ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুলকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করেন। এছাড়া প্রথম আলো ও গ্রামীন ফোন যৌথ ভাবে গ্রাম বাংলার নেপথ্যে নায়কেরা নামে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন।

   পচামাড়িয়ায় পাখি সংরক্ষনে এলাকাবাসী সচেষ্ট থাকলেও এখান কার প্রধান সমস্যা পাখি যে সকল শিমুল গাছ,বাশঁ ঝাড় ও অন্যান্য গাছে থাকে তার সবগুলো ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর। তাই অনেক সময় মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে গাছ ও বাশঁ কাটছে, এতে পাখি থাকার আবাস স্থল কমে যাচ্ছে। সেই কারনে আগে পাখি শুধু পচামাড়িয়া গ্রামের প্রায় ১বর্গ কিঃমিঃ জুড়ে থাকতো। এখন পচামাড়িয়াসহ যশোপাড়া, বড়বড়িয়া,কার্তিক পাড়াব, কানমাড়িয়া অমৃতপাড়াসহ অন্যান্য গ্রামে আবস স্থল খুজছে ও বাস করছে। পাখি সংরক্ষনের পাশাপাসি ইউপি চেয়ারম্যান প্রায় ২৫ হাজার বৃক্ষ রোপন, দেশিও মাছের অভয়যশ্রম সৃষ্টি, খাল খনন পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষনের নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন।

   পাখি সংরক্ষন সহ এ বিষয়ে সরকারের সংশিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থার সহযোগিতা ও পৃষ্ট পোষকতা না পেলে ভবিষ্যতে পচামাড়িয়া পাখি সংরক্ষন করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা এটাই এখন এলাকাবাসির বড় প্রশ্ন?